বিয়ের আগে পুরুষদের যৌন সচেতনতা: সম্পর্কের ভিত মজবুত করতে প্রয়োজনীয় কিছু বিষয়
বিয়ে শুধু দুটি মানুষের মিলন নয়; এটি এক নতুন জীবনের শুরু, যেখানে শারীরিক, মানসিক, এবং আবেগিক সংযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ের আগে যৌন সচেতনতা থাকা পুরুষদের জন্য স্বাস্থ্যকর এবং সুখী দাম্পত্য জীবনের ভিত্তি গড়ে তোলে। যৌন জীবনের নানা দিক নিয়ে সচেতনতা, সঠিক শিক্ষা এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্ককে আরও মজবুত এবং আনন্দময় করতে সহায়তা করে। আসুন জেনে নেওয়া যাক বিয়ের আগে পুরুষদের জন্য যৌন সচেতনতার কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক:
১। শারীরিক স্বাস্থ্য :
পুরুষদের বিয়ের আগে শারীরিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক
স্বাস্থ্য ও ফিটনেস বজায় রাখা শুধু যৌন স্বাস্থ্য নয়, বরং সার্বিক শারীরিক সুস্থতার
জন্যও প্রয়োজনীয়। এই সচেতনতার মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো:
STD/STI পরীক্ষা : যৌন সম্পর্ক স্থাপনের আগে HIV, HPV, গনোরিয়া, সিফিলিস,
হেপাটাইটিস-বি প্রভৃতি যৌন রোগ পরীক্ষার মাধ্যমে জানা দরকার। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে সঙ্গীকে
সংক্রমণের ঝুঁকি এড়ানো যায়।
জননাঙ্গের স্বাস্থ্য পরীক্ষা : জননাঙ্গে কোনো ধরনের সমস্যা যেমন ব্যথা, র্যাশ,
বা অন্যান্য সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
হার্ট এবং ব্লাড প্রেসার
পরীক্ষা : যৌনমিলন শারীরিক পরিশ্রমের সঙ্গে যুক্ত, এবং এতে হার্ট ও রক্তচাপের ওপর চাপ
পড়ে। তাই হাই ব্লাড প্রেশার বা হৃদরোগ আছে কিনা তা পরীক্ষা করানো দরকার।
খাদ্যাভ্যাস : সুস্থ যৌন
জীবনের জন্য সুস্থ দেহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ প্রোটিন এবং ভিটামিনযুক্ত খাদ্য
যেমন শাক-সবজি, ফল, দুধ, ডিম এবং মাছের মতো খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
ব্যায়াম : নিয়মিত ব্যায়াম
যেমন কার্ডিও, যোগব্যায়াম এবং স্ট্রেংথ ট্রেনিং স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং
যৌনমিলনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরে শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং মানসিক
চাপ কমে।
STD/STI কী : যৌন সংক্রমণ
(STI বা STD) হলো এমন রোগসমূহ, যা সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে অন্য
ব্যক্তির শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এগুলির মধ্যে রয়েছে HIV, HPV, গনোরিয়া, সিফিলিস, ক্লামিডিয়া
ইত্যাদি।
লক্ষণগুলো জানা : যৌন সংক্রমণ
হলে অনেক সময় শরীরে র্যাশ, চুলকানি, ঘা, জ্বালাপোড়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যেতে পারে।
তবে অনেক যৌন সংক্রমণ লক্ষণবিহীন থাকতে পারে, তাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ।
ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা
: অবাধ যৌনতা বা সুরক্ষাহীন যৌনমিলনের মাধ্যমে যৌন সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
কনডম ব্যবহার : যৌন সংক্রমণ
প্রতিরোধের জন্য সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম হলো কনডম ব্যবহার। কনডম শুধু STD রোধ করে না,
বরং অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণও প্রতিরোধে সহায়তা করে।
মৌখিক যৌন সম্পর্কেও সুরক্ষা
প্রয়োজন : অনেকে মনে করেন যে শুধু যৌনমিলনেই সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। তবে, মৌখিক ও অন্যান্য
ধরণের যৌনতাতেও যৌন সংক্রমণ হতে পারে, তাই সব ধরনের যৌন সম্পর্কের সময় সুরক্ষার চর্চা
করা জরুরি।
বিশ্বস্ত উৎস থেকে তথ্য
সংগ্রহ : অনেক সময় যৌন সংক্রমণ সম্পর্কে ভুল ধারণা বা মিথ প্রচলিত থাকে। তাই নির্ভরযোগ্য
বই, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, কিংবা অনলাইন স্বাস্থ্য প্ল্যাটফর্ম থেকে সঠিক তথ্য সংগ্রহ
করা উচিত।
যৌনশিক্ষা : যৌনশিক্ষা
শুধুমাত্র যৌন সংক্রমণ প্রতিরোধেই নয়, বরং একটি স্বাস্থ্যকর যৌনজীবন গড়তে সহায়তা করে।
যৌনশিক্ষা নিয়ে সচেতন হতে পারলে সম্পর্ক আরও সুন্দর এবং সুরক্ষিত হয়।
৩। মানসিক প্রস্তুতি :
মানসিক প্রস্তুতি বিয়ের আগে যৌন জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় বিয়ের
পর যৌন সম্পর্কের বিষয়ে পুরুষদের মধ্যে নানা রকম চাপ, ভয়, বা উদ্বেগ কাজ করে, যা তাদের
এবং তাদের সঙ্গীর জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সঠিক মানসিক প্রস্তুতি এবং বোঝাপড়া
এই বিষয়ে অনেক সাহায্য করতে পারে। এখানে কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো:
যৌনতা নিয়ে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা
: যৌনতা জীবন ও সম্পর্কের একটি স্বাভাবিক অংশ, তবে অনেকে এটি নিয়ে অপরাধবোধ বা ভুল
ধারণা পোষণ করেন। যৌনতা নিয়ে সঠিক ধারণা এবং ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুললে সম্পর্ককে স্বাস্থ্যকরভাবে
উপভোগ করা যায়।
সামাজিক ও পারিবারিক বাধা
দূর করা : অনেক সময় পারিবারিক বা সামাজিক বাধার কারণে যৌনতা নিয়ে সংকোচবোধ তৈরি হয়।
এই ধরনের সংকোচ দূর করতে যৌনতা সম্পর্কে খোলামেলা ভাবনা খুবই প্রয়োজন।
ভুল ধারণা দূর করা : সমাজ
ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে যৌনতা নিয়ে অনেক ভুল ধারণা তৈরি হয়, যেমন, যৌনমিলনে পারফেকশন
কিংবা অসাধারণ পারফরমেন্সের চাপ। বাস্তবে, যৌনতা হলো একটি অভিজ্ঞতা, এবং তাতে ভুল-ত্রুটি
হতেই পারে। এটি বুঝলে হতাশা এড়ানো সহজ হয়।
সুখী যৌন জীবনের মানসিক
ভিত্তি গড়া : যৌন সম্পর্ক কোনো প্রতিযোগিতা নয়, বরং এটি একটি আবেগিক ও মানসিক সংযোগের
মাধ্যম। তাই সঙ্গীর প্রতি আবেগিক সঙ্গতি এবং আস্থা তৈরি করলে যৌন সম্পর্ক সুন্দর ও
স্বাস্থ্যকর হয়।
নিজের প্রতি আস্থা : নিজের
শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতার ওপর আস্থা রাখা গুরুত্বপূর্ণ। নিজেকে ভালোবাসা এবং নিজের
সঠিক যত্ন নেওয়ার মধ্য দিয়েই আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়, যা যৌন জীবনের মান উন্নত করে।
এই মানসিক প্রস্তুতিগুলি
বিয়ের পর যৌন জীবনে শারীরিক এবং মানসিক সংযোগে সহায়তা করে।
৪। নিজের যৌন আকাঙ্ক্ষা এবং সীমা জানা : নিজের পছন্দ-অপছন্দ, সীমাবদ্ধতা এবং আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। এতে পরবর্তীতে হতাশা এড়ানো সম্ভব হয়।
আত্ম-অনুসন্ধান : নিজের
যৌন আকাঙ্ক্ষা এবং সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানতে প্রথমেই নিজের সাথে খোলামেলা ও সৎ হওয়া
দরকার। এটি আত্ম-অনুসন্ধানের একটি অংশ, যেখানে নিজেকে বোঝার মাধ্যমে নিজের পছন্দ এবং
অপছন্দ সম্পর্কে সচেতন হওয়া যায়।
নিজের চাহিদাকে সম্মান
করা : অনেক সময় সামাজিক বা পারিবারিক প্রভাবের কারণে মানুষ নিজের চাহিদা বা আকাঙ্ক্ষাকে
গোপন রাখে বা লজ্জা পায়। নিজের যৌন আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে জানা ও সেটিকে সম্মান করার মাধ্যমে
একজন আরও আত্মবিশ্বাসী ও সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করতে পারে।
নিজের শারীরিক এবং মানসিক
সীমা জানা : শারীরিক ও মানসিক সীমা সম্পর্কে সচেতন হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কতটুকু শারীরিক
সংযোগে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, কতটুকু পরিমাণে যৌনতা উপভোগ করেন – এসব ব্যাপারে নিজের
সীমা জানা উচিত।
সীমা নিয়ে সঙ্গীর সাথে
আলোচনা : সঙ্গীর সাথে খোলামেলা আলোচনা করে একে অপরের সীমা সম্পর্কে জানা সম্পর্ককে
আরও মজবুত করে। এতে সঙ্গীও আপনার সীমাকে সম্মান করতে পারবেন এবং সম্পর্কের মধ্যে আস্থা
ও শ্রদ্ধা বাড়বে।
সঙ্গীর সাথে যোগাযোগ :
যৌন আকাঙ্ক্ষা এবং সীমা নিয়ে সঙ্গীর সাথে খোলামেলা কথা বললে সম্পর্কে স্পষ্টতা আসে।
সঙ্গীর চাহিদা, সীমা, এবং অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া যৌন জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ
অংশ।
উভয়ের চাহিদা মেনে নেওয়া
: প্রত্যেকের যৌন চাহিদা এবং সীমা আলাদা হতে পারে, এবং তা নিয়ে পারস্পরিক সম্মান ও
সমঝোতার ভিত্তিতে বোঝাপড়া গড়ে তোলা গুরুত্বপূর্ণ। এতে সম্পর্কের মধ্যে সন্তুষ্টি এবং
পরিপূর্ণতা আসে।
নির্দোষ ইচ্ছাগুলি মেনে
নেওয়া : অনেক সময় সামাজিক বা পারিবারিক চাপে যৌন ইচ্ছাগুলি অপরাধবোধে পরিণত হয়। এই
ধরনের অপরাধবোধ ঝেড়ে ফেলে নিজের স্বাভাবিক আকাঙ্ক্ষাকে গ্রহণ করা উচিত। নিজেকে এবং
নিজের ইচ্ছাগুলিকে মেনে নেওয়া আত্মবিশ্বাস তৈরি করে।
সঙ্গীর সাথে চাহিদা নিয়ে
খোলামেলা আলোচনা করা : সঙ্গীর সাথে নিজের যৌন চাহিদা সম্পর্কে কথা বললে তা মেনে নেওয়া
সহজ হয়। এটি পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়ায় এবং যৌন জীবনের মধ্যে খোলামেলা পরিবেশ সৃষ্টি
করে।
উভয়ের স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়টি
গুরুত্ব দেওয়া : যৌন জীবনের মধ্যে উভয়ের আরাম এবং স্বাচ্ছন্দ্য অত্যন্ত জরুরি। নিজের
আকাঙ্ক্ষা এবং সীমাকে সঙ্গীর সাথে সমন্বয় করা হলে যৌন সম্পর্ক আরও সুন্দর হয়।
নিজের এবং সঙ্গীর সীমা
মেনে চলা : যদি কোনো বিষয়ে সঙ্গী আরামবোধ না করেন, তাহলে তা মেনে নেওয়া এবং যৌন মিলনে
সম্মতি ও আরামের গুরুত্বকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
সংক্ষেপে, বিয়ের
আগে যৌন সচেতনতা থাকা মানে নিজের ও সঙ্গীর প্রতি দায়িত্বশীল থাকা। সুস্থ এবং সুখী যৌন জীবন গড়ে তোলার জন্য এই বিষয়গুলির
ওপর গুরুত্ব দেওয়া খুবই প্রয়োজন। নিজের এবং সঙ্গীর চাহিদা ও সীমাকে সম্মান জানিয়ে পারস্পরিক
বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধার মাধ্যমে একটি মজবুত সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব।

0 Comments